হাতের সঙ্গে কাঁধের যে জয়েন্ট তার নাম সোল্ডার জয়েন্ট। কাঁধ সংলগ্ন জয়েন্টটি একটি ক্যাপসুল দ্বারা আবৃত থাকে। ক্যাপসুলটি সাধারণত খুব নমনীয় হয় এবং হাত নাড়াচাড়া করার সঙ্গে সঙ্গে এটিও অবাধে চলাচল করে। যখন ক্যাপসুলটিতে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ হয়, তখনই কাঁধের জয়েন্টে ব্যথা এবং কাঁধ নাড়াচাড়ায় সমস্যা হয়। এটাকে ফ্রোজেন শোল্ডার বলা হয়, এটির ক্লিনিক্যাল নাম- এডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস। এক্ষেত্রে কাঁধের ক্যাপসুলের প্রদাহের জন্য মুভমেন্ট কমে যায় এবং আশপাশের মাংসপেশি দূর্বল হয়ে যাওয়ার জন্য ব্যথা হয়ে থাকে। ৪০-৬০ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হন যার অধিকাংশই নারী। নন-ডায়াবেটিস রোগীদের তুলনায় ডায়াবেটিস রোগীদের তিনগুন বেশি দেখা দেয় এই সমস্যাটি। সঠিক ও দ্রুত চিকিৎসা করলে এ সমস্যা সম্পূর্ণ নিরাময় হওয়া সম্ভব। কোনো চিকিৎসা না নিলেও দুই থেকে আড়াই বছর পর এমনি ভালো হয়ে যায় এটি। তবে বিলম্বিত হয় ডায়াবেটিস, থাইরয়েড এর সমস্যা থাকলে। অনেকক্ষেত্রে, জয়েন্টে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেয়া হয়, তবে ফিজিওথেরাপিই সবচেয়ে ঝুঁকিমুক্ত চিকিৎসা।
ফ্রোজেন সোল্ডারের প্রধান কারণগুলো যদিও সুনির্দিষ্ট নয়, তবে ঝুঁকিগুলো হচ্ছে- ডায়ায়াবেটিস ও হৃদরোগী; এছাড়াও কাঁধের জয়েন্টে কোনো আঘাত, কোনো কারনে দীর্ঘদিন যদি জয়েন্টে মুভমেন্ট না করা হয়, যেমন শয্যাশায়ী বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর ক্ষেত্রে, ফুসফুস, হৃদপিন্ড বা হাতের অস্ত্রোপচারের পর, থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে ইত্যাদি।
লক্ষণঃ
ফ্রোজেন শোল্ডার সমস্যাটি তিনটি স্ট্রেজ/ পর্যায়ে লক্ষণ দেখা দেয় যেমন-
১। র্ফাস্ট স্ট্রেস: র্ফাস্ট স্ট্রেস কে বলা হয় ফ্রিজিং স্ট্রেস। এই স্ট্রেস এ ব্যথা থাকে কিন্তুু হাত তুলতে তেমন সমস্যা হয় না। রাত এবং সকালে ব্যথা থাকতে পারে। এই স্ট্রেসটি ৩-৯ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
২। সেকেন্ড স্ট্রেস:
সেকেন্ড স্ট্রেসকে বলা হয় ফ্রোজেন স্টেস। সেকেন্ড স্ট্রেস এ ব্যথা তীব্রতা বেড়ে যায় তার সঙ্গে হাতের মুভমেন্ট কমে যায়,রাত এবং সকালে ব্যথা বেড়ে য়ায। যার ফলে-
– কাঁধ থেকে হাতটা ওপরে ওঠাতে গেলেই ব্যথা অথবা হাত মাথার ওপরে ওঠাতেই কষ্ট হয়, পেছনে নিতে কিংবা জামা পরতে গিয়ে কষ্ট হয়
– কাঁধ শক্ত হয়ে যায়।
– কাঁধ থেকে হাত নড়াতে কষ্ট হয়
– আক্রান্ত পাশে শুতে কষ্ট হয়
– হাতে দুর্বলতা আসে
– ব্যথা কাঁধ থেকে আস্তে আস্তে বাহু, হাত এবং কবজি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
– রাতে ব্যথার পরিমাণ এত বাড়বে যে রোগীর ঘুম ভেঙে যাবে।
– দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম যেমন, জামা পরতে, চুলে চিরুনি করতে, বোতলের মুখ খোলা, সোফার কুশন তোলার ক্ষেত্রে মনে হবে যেন কাঁধটি জ্যাম হয়ে গেছে।
এই পর্যায় টি ৪-১২ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
৩।র্থাড স্ট্রেস:
র্থাড স্ট্রেসকে বলা হয় স্টেজ ওফ রিকাভারি, অর্থাৎ এই স্ট্রেস এ হারিয়ে যাওয়া মুভমেন্টগুলো পুনরায় ফিরে আসে এবং ব্যথা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। চিকিৎসা না নিলে এটি ১-৩ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
শনাক্তকরণঃ
ফ্রোজেন শোল্ডারে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এক্স-রে বা এমআরআই করে ক্যাপসুলে প্রদাহের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর শারীরিক পরীক্ষা LAM/ ল্যাম টেস্টের মাধ্যমে সমস্যা নিশ্চিত করেন।
চিকিৎসাঃ
ফ্রোজেন শোল্ডারের রোগীর কাছে মনে হয় ব্যথাই প্রধান সমস্যা। কিন্তু এখানে মূল সমস্যা হলো জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। রোগী ব্যথার ভয়ে হাত নাড়ানো বন্ধ রাখলে জয়েন্ট আরও শক্ত হয়ে যাবে। তাই ব্যথা কমানোর ওষুধের চেয়ে হাত নাড়ার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চিকিৎসা বেশি জরুরি। এ ক্ষেত্রে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রেখে হাত নাড়াচাড়া করার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাঃ
তিনটি পর্যায় রয়েছে, তাই এর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাও পর্যায় অনুযায়ী করতে হবে। ফ্রোজেন শোল্ডারের রোগীদের জন্য ম্যানুয়াল চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-
– Maitland technique.
– Shoulder girdle mobilaization
– ~kK I‡qf †_ivwc
– KvB‡ivcÖvKwUK GWRvó‡g›U
— এ ছাড়াও সেল্ফ থেরাপিউটিক এক্সারসাইজগুলো- এগুলোর মধ্যে -কডস ম্যানএক্সারসাইজ এবং ট্র্যাপ ফ্লাই।
– স্ক্যাপুলার স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ,
– এছাড়াও রয়েছে কাইরোথেরাপি যা অল্প সময়েই ব্যথা নিরাময় সম্ভব।
এই সমস্যাটির জন্য যে দিকগুলো সতর্কতা অবলম্বন করবেন-
ফিজিওথেরাপির নামে কেবল বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার করে যার ফলে তেমন উপকার আসেনা। তাই একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসকের পরামর্শেই ম্যানুয়াল চিকিৎসা গ্রহন করবেন।
ডা. নাফিসা তাহেরা ( পিটি)
সিনিয়র ফিজিওথেরাপিস্ট, ফিমেল ইউনিট
হাসনাত’স ফিজিওথেরাপি, লালমাটিয়া