You are currently viewing স্থূল, বাড়তি ওজন বা মুটিয়ে যাওয়া (obesity)

স্থূল, বাড়তি ওজন বা মুটিয়ে যাওয়া (obesity)

স্থূলতা, বাড়তি ওজন বা মুটিয়ে যাওয়া (obesity) কী?

এমন একটি শারীরিক অবস্থা যা শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার ফলে নানান রোগ সৃষ্টিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সময়ের সাথে সাথে শরীরে ফ্যাট জমে, যাদের ক্যালোরির পরিমাণ খুব বেশি।এটি রোগাক্রান্ত মানুষের আয়ুষ্কাল কমিয়ে দেয়। বর্তমানে উন্নত দেশে স্থূলতা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে উন্নত দেশে স্থূলতা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের ৫০ কোটিরও অধিক যুবারা এখন এ সমস্যায় আক্রান্ত। বাংলাদেশেও এই সংখ্যার পরিমাণ একেবারেই কম নয়। বিশেষ করে সচ্ছল পরিবারের শিশু-যুবাদের একটি বিরাট অংশ ইতিমধ্যেই স্থূলতায় আক্রান্ত।

আপনি কি স্থূল?

কি করে জানবেন যে এক জন ব্যক্তির ওজন বেশি অথবা সে স্থূলকায়? এর উত্তর হল তার বডি মাস ইনডেক্স (বি-এম-আই)। বি-এম-আই একটি পরিসংখ্যানের পরিমাপ যা আপনার উচ্চতা এবং ওজন থেকে পাওয়া যায়। একজন ব্যক্তিকে স্থূলকায় বলা যায় যখন তার দেহের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ২০% বেশি হয়।

প্রাপ্তবয়স্কদের

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, স্থূলত্ব হিসাব করা হয়

ত্তজনে কম : বিএমআই যদি ১৮.৫ এর চেয়ে কম হয়।

সাধারণ : বিএমআই যদি ১৮.৫ থেকে <২৫ হয়।

অতিরিক্ত ওজন: বিএমআই যদি ২৫ থেকে <৩০ হয়।

স্থূল: বিএমআই যদি ৩০.০ বা তার চেয়ে বেশি হয়।

আপনি কি জানতেন?

আপনার কোমরের মাপ আপনার স্বাস্থ্যের সূচক। আপনার স্বাস্থ্য হয়তো বিপদের সম্মুখীন হয়েছে: যদি আপনি পুরুষ হন এবং আপনার কোমরের মাপ হয় ৯৪ সেন্টিমিটার (৩৭ ইঞ্চি) অথবা তার বেশি হয়। আপনি যদি মহিলা হন এবং আপনার কোমরের মাপ হয় ৮০ সেন্টিমিটার (৩১.৫ ইঞ্চি) অথবা তার বেশি হয়।

এক নজরে স্থূলতার কারণসমূহ-

অতিরিক্ত শর্করা, চর্বি বা আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ

শরীর চর্চা বা ভারী কাজ না করা

জিনগত বা হরমোনগত কারণ

মনঃস্তাত্বিক কিছু কারণ

ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

জাংক ফুড খাওয়া

গবেষকদের দাবি, অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার কারণে স্থূলতার প্রধান কারণ হতে পারে না। কার্বোহাইড্রেট-ইনসুলিন মডেল অনুসারে, বর্তমানে স্থূলতা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, আমরা প্রতিদিন কতটা খাচ্ছি, যে খাবারগুলো খাই, সেগুলি হরমোন ও বিপাককে কতটা প্রভাবিত করছে তা নজর রাখা দরকার। কারণ অনেকেই মনে করেন কম খেলে শরীরের মেদ ঝরে যায়। এটা ভুল ধারণা। কম খাওয়ার চেয়ে কী খাচ্ছেন তা নজর রাখা উচিত।

উপসর্গ

অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি।

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তের চাপ এবং অত্যধিক ওজনের জন্য স্ট্রেস।

দৈনন্দিন কাজ কর্মের সময়ে শ্বাসের অসুবিধা।

অত্যধিক শারীরিক ওজনের জন্য গাঁটে ব্যথা।

উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা।

অনিয়ন্ত্রিত ক্ষুধার যন্ত্রণা।

অত্যধিক উদ্যমহীনতা। 

স্থূলতা এর চিকিৎসা

আপনার শরীরের বাড়তি ওজন ও মেদ কমাতে বর্তমানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুক্ত হলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ক্যাভিটেশন থেরাপি। যা আপনাকে দিবে শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনের সহযোগিতা। এছাড়াও দেখা গিয়েছে যে শুধু মাত্র ওষুধ-পত্র বা অস্ত্রোপচার সঠিক ভাবে কার্যকরী হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি আপনার জীবনধারার কিছু পরিবর্তন করছেন। যদি আপনার জীবনধারা সঠিক না হয় তাহলে অস্ত্রোপচারের কয়েক বছর পর আবার আপনার ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। নিচে দেওয়া পরামর্শগুলি অনুসরণ করে একজন ভাল অবস্থায় থাকতে পারবেন: 

প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে ব্যায়াম করা।

সঠিক খাদ্য সঠিক পরিমাণে খাওয়া।

সঠিক পরিমাণে ঘুমানো (কমপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা)।

মিষ্টি বেশি আছে এমন খাবার এড়িয়ে যাওয়া (বেকারির পণ্য, চকোলেট, মিষ্টি)।

প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং জাঙ্ক খাদ্য এড়িয়ে যাওয়া।

মদ্যপান হতে বিরত থাকা।

নিয়মিত ওজন দেখা।

বছরে একবার সম্পূর্ণ শরীরের পরীক্ষা করা।

প্রতি ছয় মাস অন্তর রুটিন রক্ত পরীক্ষা করা।

খাদ্যের অন্তর্গত হবে ফাইবার যুক্ত খাদ্য, ফল, সবজি, চর্বিহীন প্রোটিন, রকমারি শস্যর মিশ্রিত কার্বোহাইড্রেট এবং ডেয়ারির পণ্য।

চিকিৎসকের নির্দেশ অনুসারে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। কয়েকটি নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যের অবস্থার জন্য, যেমন থাইরয়েডের সমস্যা, প্রতিদিন ওষুধ নিতে হবে। এটি না করলে ওজন বেড়ে যাবে এবং জীবন সংশয় হতে পারে।

ক্যাভিটেশন থেরাপি বর্তমান সময়ের আধুনিক প্রযুক্তির এক অন্যন্য নাম যা আপনার স্বাভাবিক ওজন ফিরিয়ে এনে দেবে এবং জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি ডায়েট চার্ট মাধ্যম খাদ্যাভ্যাস করে আপনি আপনার কাংখিত ওজন ও স্বাভাবিক জীবন এ ফিরে আসতে পারেন।

লেখক: ডাঃ এ এইচ মহিউদ্দিন (পিটি),
কনসালটেন্ট (ফিজিওথেরাপি),হাসনাত’স ফিজিওথেরাপি লালমাটিয়া

Leave a Reply