You are currently viewing স্ট্রোক কি এবং কেন হয় এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা কি ?

স্ট্রোক কি এবং কেন হয় এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা কি ?

সেরিব্রোভাস্কুলার অ্যাক্সিডেন্ট (CVA) বা সেরিব্রোভাস্কুলার ইনসাল্ট (CVI) বা ব্রেইন অ্যাটাক বা মস্তিষ্ক আক্রমণ। বর্তমান বিশ্বে অসংক্রমক ব্যাধী ফলে মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে স্ট্রোক অন্যতম। সারা বিশ্বে প্রতিবছর ১৩.৭ মিলিয়ন মানুষ স্টকে আক্রান্ত হন।আমাদের দেশে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স এন্ড হসপিটালের তথ্য মতে প্রতি ১০০০ জন মানুষের মধ্যে ১২ জন ব্যক্তি স্টকে আক্রান্ত হন।বাংলাদেশের স্ট্রোকের পাদুর্ভাব ০.৩ % যদিও এর কোন সঠিক তথ্য রেকর্ড করা হয়নি। স্টোক একটি অতি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা এবং এর দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা না গেলে রোগীকে পঙ্গুত্ব বরণের পাশাপাশি তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

স্ট্রোক কি?

স্ট্রোক হলো একটি রোগ যেখানে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহের বিঘ্নতার জন্য কোষের মৃত্যু ঘটে। 

স্ট্রোকের ধরনঃ

সিডিসি (CDC= Center for Disease Control and prevention) এর মত অনুযায়ী ব্রেইন স্ট্রোক তিন ধরনের-

১! ইশকেমিক স্ট্রোক ( Ischemic stroke) : মস্তিষ্কের রক্তনালীর ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে (blood Clot) রক্ত সরবরাহ বিঘ্ন ঘটালে কিছু ব্রেইন টিস্যু মারা যায় , এটাই ইশকেমিক স্ট্রোক। ৮৫%স্ট্রোকই ইশকেমিক স্ট্রোক । উচ্চরক্তচাপ ইশকেমিক স্ট্রোকের বড় কারণ ।

২! হেমোরেজিক স্ট্রোক ( Hemorrhagic Stroke) : মস্তিষ্কের ভিতরে কোন রক্তনালী ছিঁড়ে গেলে হেমোরেজিক স্ট্রোক হয় । এই ধরনের স্ট্রোকে তিন মাসের মধ্যে মৃত্যু ঝুকি অনেক অনেক বেশি ।

৩! খুব ছোট স্ট্রোক ( Mini Stroke or Transient Ischemic Attack- TIA)ঃ মস্তিষ্কের রক্তনালীতে অস্থায়ীভাবে অল্প কিছু সময়ের জন্য রক্ত সরবরাহ বিঘ্ন হলে এই ধরনের স্ট্রোক হয় ! যেটা দ্রুতই আবার ভাল হয়ে যায়।

স্ট্রোকের লক্ষণ সমূহ:

স্ট্রোক, মস্তিষ্কে কতোটা ক্ষতি করবে এটা নির্ভর করে এটি মস্তিষ্কের কোথায় ঘটেছে এবং কতোটা জায়গা জুড়ে হয়েছে, তার ওপর। স্ট্রোকের লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হয়।

১. আচমকা হাত, পা বা শরীরের কোনও একটা দিক অবশ হয়ে যাওয়া। হাত ওপরে তুলতে না পারা।

২. চোখে ঝাপসা/ অন্ধকার দেখা।

কথা বলতে অসুবিধা হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া।

৩. ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া।

৪. জিহ্বা অসাড় হয়ে, মুখ বেঁকে যাওয়া।

৫. শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে পড়ে যাওয়া/জ্ঞান হারানো।

৬. হঠাৎ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাজ পড়ার মতো তীব্র মাথাব্যথা।

৭. বমি বমি ভাব, বমি, খিঁচুনি হওয়া।

মাথা ঘুরানো, হাটতে অসুবিধা হওয়া, ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হওয়া

৮. কথা বলতে সমস্যা হওয়া

অবশ, দুর্বল লাগা, শরীরের এক পাশ অকেজো হওয়া

৯. চোখে ঘোলা লাগা, অন্ধকার লাগা বা ডাবল দেখা হঠাৎ খুব মাথা ব্যথা। 

যারা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন:

বয়স: আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে, আপনার ধমনীগুলো আরো শক্ত হয়ে যায়, যার ফলে সেগুলো আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ।

স্বাস্থ্যগত সমস্যা: স্বা‌স্থ্যের কিছু সমস্যা আপনার স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন:

  • উচ্চ রক্তচাপ
  • অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (অনিয়মিত হৃদস্পন্দন)
  • ডায়াবিটিস
  • উচ্চ কোলেস্টেরল।

জীবনশৈলী: আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে সব কাজ করি তার ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে, যার অন্তর্ভুক্ত হল:

  • ধূমপান
  • খুব মোটা হওয়া
  • খুব বেশি মদ্যপান করা
  • বেশি শরীরচর্চা না করা
  • অস্বা‌স্থ্যকর খাবার খাওয়া।

স্ট্রোকের ঝুকি কমানোর উপায়:

১. ব্লাড প্রেসার জানা এবং কন্ট্রোল করা ।

২. ধূমপান না করা ।

৩. কোলেসটেরল এবং চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া ।

৪. নিয়ম মাফিক খাবার খাওয়া ।

৫. সতর্ক ভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা ।

৬. নিয়ম করে হাটা বা হালকা দৌড়ানো ।

৭. দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা ।

৮. মাদক না নেয়া ,মদ্য পান না করা ।

৯. ওজন কমানো ।

স্ট্রোক হলে কি করবেন?

স্ট্রোকের লক্ষণ ও পরবর্তী ব্যবস্থায় নেওয়ার বিষয়ে একটি শব্দ মাথায় রাখতে হবে সেটা হল FAST। এখানে (F=Face) মুখ বাঁকা হয়ে যাওয়া অথবা মুখের এক পাশ ড্রপ হওয়া, ‌(A=Arm) হাত অবশ হয়ে যাওয়া অথবা হাতের শক্তি কমে যাওয়া, (S=Speech) কথা জড়িয়ে যাওয়া এবং(T=Time) যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।

এ ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে বিছানায় বা মেঝেতে কাত করে শুইয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে না হলে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

স্টোক পরবর্তী চিকিৎসা ও পুনর্বাসন:

স্ট্রোক পরবর্তী চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই কোন ধরনের স্ট্রোক তা সনাক্ত করা অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন। স্টোক সনাক্ত করতে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় যেমন:- কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি স্ক্যান (CT), ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং স্ক্যান (MRI), ECG (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম): হৃদস্পন্দন পরীক্ষা  করা, ডপলার আলট্রাসাউন্ড: গলার ধমনীগুলিতে অবরোধ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা, রক্তাচপ মাপা এবং রক্ত পরীক্ষা (রক্ত জমাট বাঁধা, ব্লাড সুগার এবংকোলেস্টেরলের মাত্রা)।

চিকিৎসা: 

স্ট্রোকের পুনর্বাসন:

পুনর্বাসন বলতে বোঝায় দৈনন্দিন কাজকর্ম যথাসম্ভব স্বাভাবিক অব‌স্থায় ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা এবং অক্ষমতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করা। প্রতিদিনের স্বাভাবিক কার্যকলাপগুলি করতে সক্ষম করা, চলাফেরা করতে, সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করতে এবং যথাসম্ভব স্বাধীন থাকতে সাহায্য করার ওপরে মনযোগ দেওয়া হয়।

তাই স্ট্রোকের পরে অবিলম্বে পুনর্বাসন শুরু করা উচিত। এই পুনর্বাসন সেবা হাসপাতালে শুরু করতে হবে এবং প্রয়োজনে বাড়িতে চালিয়ে যাওয়া উচিত।

ফিজিওথেরাপি: স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। নিয়মিত ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে নিউরোপ্লাস্টিসিটি ডেভলপ করে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি আবার বৃদ্ধি পায় না কিন্তু মস্তিষ্কের অন্যান্য কোষগুলি এই ক্ষতিগ্রস্ত কোষের দায়িত্ব নিতে পারে। যার ফলে দৈনন্দিন কাজ করবো যখন হাটা কথা বলা সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করা ইত্যাদি দক্ষতা গুলি ফিরে পাওয়া যায়। ফিজিওথেরাপি দুর্বল পেশীগুলির শক্তি বৃদ্ধি, সচলতা, ভারসাম্য ও সমন্বয়ের উন্নতি এবং চলাফেরা করতে সাহায্য করে। তাই স্ট্রোক পরবর্তী ফিজিওথেরাপি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করা উচিত। একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। খুব অল্প সময়েই ষ্ট্রোক হতে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।চিকিৎসার জন্য হাসনাতের ফিজিওথেরাপি সেরা বিকল্প.

Leave a Reply