You are currently viewing কোমরে ব্যথা কারণ লক্ষণ ও আধুনিক চিকিৎসা

কোমরে ব্যথা কারণ লক্ষণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ব্যথার অভিজ্ঞতা হয় নাই এমন কেউ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার তা যদি হয় কোমরে ব্যথা তাহলে তো কথাই নাই। আমরা যেসকল ব্যথায় ভুগি তার মধ্যে কোমরে ব্যথা একটি অন্যতম কারণ। কারণ ভেদে সকল বয়েসের মানুষের মধ্যে কোমরে ব্যথা দেখা যায়। তবে মধ্যম ও অধিক বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। শতকরা ৯০ শতাংশ লোক জীবনের কোনো না কোনো সময়ে কোমর ব্যথায় ভোগে। স্বল্পমেয়াদি ব্যথা এক মাসের কম সময় থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রোনিক ব্যথা এক মাসের অধিক সময় থাকে। উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ৯০ শতাংশ রোগী এক মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।

কোমরে ব্যথা কারণ: 

মনে রাখতে হবে, কোমরে ব্যথা কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণমাত্র। তবে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোমার ব্যথার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। রোগী সাধারণত কোনো ভারী জিনিস তোলার সময় হঠাৎ করে এ ব্যথাটা অনুভব করে। মেরুদন্ডের পাশে মাংশপেশি ও লিগমেন্ট আঘাতপ্রাপ্ত হলে অর্থাৎ টান বা স্পেইন হলে এই ব্যথাটা অনুভূত হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যতটুকু সচল থাকা দরকার, ততটুকু থাকি না। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা বা এর বেশি সময় বসে থাকি। গবেষকদের মতে, প্রতিদিন ২০ হাজার ধাপ হাঁটা দরকার। গবেষণায় দেখা গেছে, কোমর ব্যথা দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ার কারণ একই ভঙ্গিতে অনেকক্ষণ থাকা। এ ছাড়া সারাদিনের কাজের মধ্যে অসাবধানতায় ভয়ানক কোমর ব্যথা হতে পারে।

লাম্বার স্পনডোলাইসিস : কোমরের পাঁচটি হাড় আছে। কোমরের হাড়গুলো যদি বয়সের কারণে বা বংশগত কারণে ক্ষয় হয়ে যায়, তখন তাকে লাম্বার স্পনডোলাইসিস বলে।

পিএলআইডি : এটিও শক্তিশালী একটি কারণ। এটি সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছরের মানুষের ক্ষেত্রে বেশি হয়। মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। এটি পূরণ থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে। এ ডিস্ক যদি কোনো কারণে বের হয়ে যায়, তখন স্নায়ুমূলের ওপরে চাপ ফেলে। এর ফলে কোমরে ব্যথা হতে পারে।

  বড় কোনো আঘাতের ইতিহাস থাকলে, কোমর ব্যথার পাশাপাশি বুকে ব্যথা হলে, রোগীর আগে কখনও যক্ষ্মা হয়ে থাকলেও বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে।

ক্যান্সার, অস্টিওপোরোসিস, এইডস, দীর্ঘকাল স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের ইতিহাস থাকলে কোমর ব্যথাকে অবহেলা করা চলবে না।

নন-স্পেসিফিক লো বেক পেন

অনির্দিষ্ট কারণে হাড়, মাংসপেশি, স্নায়ু—তিনটি উপাদানের সামঞ্জস্য নষ্ট হলে এই ব্যথা হয়। এটি যুবকদের মধ্যে বেশি হয়। এই ব্যথা পুরোপুরি সারানোর চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি। এই ব্যথা নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা চলছে।

লক্ষণ

প্রথম দিকে এ ব্যথা কম থাকে এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে এ ব্যথা কিছুটা কমে আসে। কোমরে সামান্য নড়াচড়া হলেই এ ব্যথা বেড়ে যায়।

  ব্যথার সঙ্গে পায়ে ব্যথা নামতে বা উঠতে পারে, হাঁটতে গেলে পা খিঁচে আসে বা আটকে যেতে পারে, ব্যথা দুই পায়ে বা যে কোনো এক পায়ে নামতে পারে। কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো ও শক্ত ভাব হয়ে যাওয়া।

যারা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে একই ভঙ্গিতে কাজ করেন। এতে দেখা যায়, কোমরের মাংস পেশি, কোমরের বিভিন্ন জোরা বা জয়েন্টস ও স্নায়ুতে চাপ তৈরি হয়। এরকম কিছুদিন চলতে থাকলে সেটা ব্যথায় রূপ নেয় ও পরবর্তীতে ব্যথা প্রচণ্ড হয়ে থাকে।

দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করলে বা বেশি সামনে ঝুঁকে গাড়ি চালালে কোমর ব্যথা হতে পারে।

যারা বয়োবৃদ্ধ আছেন তাদের দীর্ঘদিন ধরে শরীর নাড়াচাড়া বা জয়েন্টস একই অবস্থায় থাকতে থাকতে মাংশপেশী শিকিয়ে যায়, জয়েন্টসগুলো শক্ত হয়ে স্নায়ুর উপর চাপ বৃদ্ধি করে ফলে ব্যথা হয়।

এছাড়াও অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোগ। যাতে আমাদের শরীরের হাড়গুলো ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে পারে না। যে কারণে হাড়গুলো নরম ও ভঙ্গুর হয়। আবার এতে আমাদের দুই কশেরুকার মাঝে যে নরম জেলির মতো পদার্থ থাকে বা ইন্টারভারটিব্রাল ডিস্ক থাকে তার উপর চাপ পড়ে। সেটা আবার আমাদের শরীরের দুই পাশের ব্যথা নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুর ওপর চাপ বাড়ায় এবং কোমরে ব্যথা হতে পারে।

কাদের বেশি হয়?

১. কোমরে ব্যথা সাধারণত বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। বেশি দেখা যায় ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের পর থেকে।

২. কায়িক শ্রমের অভাব বা নিয়মিত ব্যায়ামের অভাবে পেট ও পিঠের মাংসপেশি চাপ ধরে যায়। ফলে একটু পরিশ্রমেই ব্যথা হতে পারে।

৩. অতিরিক্ত ওজনের কারণে কোমরের মাংসপেশি এবং হাড়ের ওপর চাপ পড়ে। ফলে ব্যথা হতে পারে। 

৪. মদ্যপান এবং স্মোকিং-এর কারণেও কোমরে ব্যথা হয়। স্মোকিং-এর কারণে রক্তনালী চিকন হয়ে যায় এবং কোমর থেকে নিচের দিকে ঠিকমত রক্ত প্রবাহ হয় না। যার ফলে হাড় ঠিকমত পুষ্টি পায় না এবং দুর্বল হয়ে পড়ে।

রোগ নির্ণয়

  কোমরের কিছু পরীক্ষা রয়েছে। ফরোয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা, ব্যাকওয়ার্ড বন্ডিং পরীক্ষা।

কোমরের ডিজিটাল এক্স-রে এবং এমআরআই করতে হবে।

রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা হয়। ক্যালসিয়ামের পরীক্ষা, ইউরিক এসিডের পরিমাণ, বিএমডি, শরীরে বাত আছে কি না এসব পরীক্ষা করতে হয়।

কখন সতর্ক হবেন?

কোমরে ব্যথার পাশাপাশি কিছু কিছু সিম্পটমস আছে যা অনেক রোগের অ্যালার্মিং সাইন। যেমন-

  যদি কোমরে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে প্রস্রাব বা পায়খানার কোনো পরিবর্তন খেয়াল করেন।

যদি সঙ্গে জ্বর থাকে।

আঘাত পেলে বা কোনো প্রকার ট্রমা হলে।

  যদি ব্যথার তীব্রতা প্রচণ্ড আকার ধারণ করে এবং রেস্ট নিলেও না কমে।

যদি ব্যথা এক বা দুই পায়েই নেমে যায়, বিশেষ করে হাঁটুর নিচে।

যদি ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বলতা, অবশভাব বা পায়ে ঝিম ঝিম অনুভুতি হয়।

  যদি ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমতে থাকে।

  যে কোনো প্রকার স্টেরয়েড ওষুধ খাওয়ার পর যদি ব্যথা শুরু হয়।

যদি আপনার অতিরিক্ত মদ পান বা সিগারেটের বদভ্যাস থাকে।

চিকিৎসাঃ 

কোমরব্যথার চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো ব্যথা নিরাময় করা এবং কোমরের নড়াচড়া স্বাভাবিক করা। পূর্ণ বিশ্রাম কিন্তু দীর্ঘদিন বিশ্রাম নিলে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়। তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ওজন তোলা, মোচড়ানো পজিশন, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ও সামনে ঝুঁকে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। সঠিক উপায়ে বসার অভ্যাস করতে হবে। 

খাদ্যতাালিকা : ভিটামিন-ডি’সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এমন অনেক খাবার আছে, যেগুলো ব্যথা কমায়, সেই খাবার খাবেন।

যেমনঃ  খেজুর, কালিজিরা, অলিভ অয়েল, তরমুজ ইত্যাদি খাবার ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত এবং বেশি বেশি পানি পান করুন। গরু, খাসি ও মহিষের মাংস খাবেন না। প্রতিদিন ৩০ মিনিট শরীরে রোদ লাগান। ধূমপান বর্জন করুন।

লেবুর শরবত: লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি যন্ত্রণা উপশমে খুবই কার্যকারী।

অ্যালোভেরা: প্রতিদিন নিয়ম করে অ্যালোভেরা শরবত খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।

হলুদ: দুধের সঙ্গে নিয়ম করে হলুদ খেলে কোমরের ব্যথা অনেকটাই কমতে পারে।

ব্যথা তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট কিংবা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যথা তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তিন-চার সপ্তাহ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রাখা হতে পারে। 

লালমাটিয়া একমাত্র বিশেষায়িত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হাসনাত’স ফিজিওথেরাপি দিচ্ছে আধুনিক চিকিৎসার নিশ্চয়তা। কোমরে ব্যথা হতে মুক্তি দিতে সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি: 

শক ওয়েভ থেরাপি। 

ভ্যাকুয়াম থেরাপি। 

কাইরোপ্রাকটিক এডজাস্ট মেন্ট থেরাপি। 

মাইওফেসিয়াল রিলিজ থেরাপি। 

এছাড়াও আছে- 

পুরুষ ও মহিলা রোগীদের জন্য পৃথক বিশেষজ্ঞ ফিজওথেরাপি চিকিৎসক। 

রোগী ভর্তি রাখার সু ব্যবস্থা। 

দৃষ্টি নন্দন ও নিবিড় পরিবেশ। 

অপারেশন বিহীন আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা। 

লেখক: ডাঃ এ এইচ মহিউদ্দিন (পিটি),
কনসালটেন্ট (ফিজিওথেরাপি),হাসনাত’স ফিজিওথেরাপি লালমাটিয়া

Leave a Reply